Food

অ্যাপেল সিডার ভিনেগারের যত কথা 

আমরা সবসময়ই এমন সব জিনিস পছন্দ করি যেগুলো একসাথে অনেকগুলো কাজে ব্যবহার করা যায়। এইরকম পছন্দের কারণ হলো এর মাধ্যমে যেমন আমাদের একেক কাজে একেক জিনিস খুজে বেড়ানোর সময় বাঁচে তেমনি টাকাও বাঁচে অনেক। ভাবুন তো আপনি একটা প্রোডাক্ট কিনলেন যা আপনার স্বাস্থ্য সুরক্ষায় সাহায্য করবে, ডায়েট প্ল্যান থাকলে তাতেও ভূমিকা রাখবে আবার স্কিন কেয়ারের জন্যও পারফেক্ট। ঠিক তেমন একটি প্রোডাক্টই হলো অ্যাপেল সিডার ভিনেগার। 

অ্যাপেল সিডার ভিনেগারের সাথে আমরা সবাই কম-বেশি পরিচিত। নাম শুনে পরিচিত কিন্তু এর কাজ বা উপকারিতা, এর ইতিহাস কি ইত্যাদি না জানার কারণে ব্যাবহার করি না অনেকেই। 

অ্যাপেল সিডার ভিনেগার কি?

প্রথমেই অ্যাপেল সিডার ভিনেগার কি তা নিয়ে একটু কথা বলা যাক। নাম শুনে আমরা ভেবে থাকি এটি হয়তো অ্যাপেল থেকে তৈরি এক ধরনের ভিনেগার যা রান্নায় ব্যাবহার করা হয় বা বিভিন্ন স্বাস্থ্য সমস্যার সমাধানে ব্যবহার করা হয়। কিন্তু ব্যাপারটি এমন না যে শুধু অ্যাপেল এর রস থেকেই এটি তৈরি হয়ে যায়। এটি তৈরিতে প্রথমে অ্যাাপেলের পিওর রস সংগ্রহ করা হয়। এরপর সেই রসের সাথে ইস্ট মিশানো হয় ফারমেন্টেড করার জন্য। এই পর্যায় অ্যাপেলের রসে থাকা চিনি ফারমেন্টেড হয়ে সিডারে পরিণত হয়। এরপর এতে উপকারি ব্যাকটেরিয়া মিশানো হয় যা সিডারকে অ্যাসিটিক অ্যাসিডে পরিণত করে, যা এই ভিনেগারের প্রধান উপাদান। এই ভিনেগার ১০০% হালাল এবং সবাই এটি অনায়াসে ব্যাবহার করতে পারবে।

স্বাস্থ্য সুরক্ষায় অ্যাপেল সিডার ভিনেগার

বহুকাল ধরেই অ্যাপেল সিডার ভিনেগার বিভিন্ন কাজে ব্যাবহার করা হয়। ক্লিনিং থেকে শুরু করে রান্না করা বা বিভিন্ন স্বাস্থ্য সমস্যার প্রাকৃতিক সমাধান হিসেবে এর ব্যাবহার রয়েছে অনেক। 

বলা হয়ে থাকে যে হিপোক্রেটিস,ঔষধের জনক,এটি একটি প্রাকৃতিক অ্যান্টিবায়োটিক এবং ডিটক্সিফাইং এজেন্ট হিসাবে ব্যবহার করেছিলেন। চলুন তবে আজকে জেনে নেয়া যাক বর্তমানে আমরা এই অ্যাপেল সিডার ভিনেগার দিয়ে কি কি করতে পারি বা কি কি উপকার পেতে পারি।

অতিরিক্ত ওজন আমাদের কম বেশি সবার জীবনেরই একটি দুশ্চিন্তার মহা কারণ। এই ওজন নিয়ন্ত্রনে আমরা কত-শত কাজই না করে থাকি। অ্যাপেল সিডার ভিনেগার ওজন নিয়ন্ত্রণে বিশাল এক সহায়কের ভূমিকা পালন করে। প্রতিবেলা খাবারের আগে যদি একটু অ্যাপেল সিডার ভিনেগার পানির সাথে মিশিয়ে খাওয়া হয় তাহলে তা ক্ষুধার পরিমাণ কমায় এবং খাওয়ার সময় আমাদের কার্বোহাইড্রেট বা ক্যালরি গ্রহণের চাহিদা কমায়। আর এতে থাকা অ্যাসিটিক অ্যাসিড কার্বোহাইড্রেটের হজমের গতি ধীর করে দেয় ফলে যেহেতু খাবার আস্তে আস্তে হজম হয় তাই দীর্ঘক্ষণ পেট ভরা থাকে বা ক্ষুধা লাগেনা। এতে কম খাবার খাওয়া হয় এবং স্বাস্থ্যকর উপায়ে দিন দিন ওজন কমতে থাকে।

অ্যাপেল সিডার ভিনেগারে অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল প্রপার্টিসও রয়েছে। এটি ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়া এবং সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য একটি দুর্দান্ত প্রাকৃতিক উপাদান। বিভিন্ন ধরনের ফাংগাসের বিরুদ্ধেও এটি বেশ উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে। 

এছাড়াও অ্যাপেল সিডার ভিনেগার অ্যাসিড রিফ্লাক্সের লক্ষণগুলো থেকে মুক্তি দেয় আবার এর পাশাপাশি শরীরে কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণেও সাহায্য করে। আমাদের আশেপাশের অনেক মানুষই প্রতিনিয়ত অ্যাপেল সিডার ভিনেগার ব্যাবহারের মাধ্যমে নানান শারীরিক সমস্যা থেকে রক্ষা পাচ্ছে। যাদের ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকেনা একদমই তাদের জন্য বেস্ট চয়েজ হতে পারে এই অ্যাপেল সিডার ভিনেগার। কারণ এটি রক্তে সুগার লেভেল ব্যালেন্স করার মাধ্যমে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। প্রতিদিন সকালে এক গ্লাস কুসুম গরম পানিতে ২ চা চামচ অ্যাপেল সিডার ভিনেগার মিশিয়ে খালি পেটে খেলে তা ওজন নিয়ন্ত্রণ করে,সারাদিনে ক্ষুধা লাগার পরিমাণ কমায় আবার শরীর থেকে বিভিন্ন ক্ষতিকর টক্সিনও বের করতে সাহায্য করে। 

যেহেতু অ্যাপেল সিডার ভিনেগারের ব্যাবহার স্বাস্থ্যের বিভিন্ন ঝুঁকি কমাতে হয়ে থাকে তাই এটি কেনার সময় আমাদের উচিত বাজারের বেস্ট ব্র্যান্ডের অ্যাপেল সিডার ভিনেগারটাই কেনা। সেই ক্ষেত্রে আমার প্রথম পছন্দ রাফায়েল সাল্গাদো বা আর.এস- এর অ্যাপেল সিডার ভিনেগার। কারণ আর.এস- অ্যাপেল সিডার ভিনেগার পারফেক্টলি ব্যালেন্সড হওয়ার পাশাপাশি সরাসরি স্পেইন থেকে সংগৃহীত অরগানিক অ্যাপেল দ্বারা তৈরি হয়। 

ত্বকের যত্নে অ্যাপেল সিডার ভিনেগার

ত্বকের সমস্যা আমাদের সবারই একটা কমন দুশ্চিন্তার কারণ। এই ত্বকের সমস্যা নানান ধরণের হয়ে থাকে। যেমন অনেকে এক্সেসিভ অয়েলি স্কিনের সমস্যায় ভুগে। আবার অনেকের স্কিন এতোই ড্রাই থাকে যে ১২মাসই স্কিন ডিহাইড্রেটেড অনুভূত হয়। আর একনে,পিম্পল বা বিভিন্ন কারণে ব্রেক-আউটস এর সমস্যা তো প্রতিমাসেই হয়তো একবার ফেইস করা লাগে। 

কিন্তু আমরা কি জানি যে এই অ্যাপেল সিডার ভিনেগার ব্যাবহার করে আমরা খুব সহজেই এই ধরনের সমস্যাগুলোর সমাধান খুজে পেতে পারি ঘরে বসেই।

একনে এবং পিম্পলের সমস্যায়

অ্যাপেল সিডার ভিনেগারে অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল বা অ্যান্টিফাঙ্গাল জাতীয় উপাদান থাকায় এটি ত্বকের ব্যাকটেরিয়াজনিত কারণে হওয়া পিম্পল বা ফাঙ্গাল একনে থেকে ত্বককে রক্ষা করে। আপনি যদি এই জাতীয় সমস্যায় ভুগে থাকেন তাহলে আপনার উচিত হবে অ্যাপেল সিডার ভিনেগারের উপর ভরসা করা নির্দ্বিধায়।

  • একটি বাটিতে অ্যাপেল সিডার ভিনেগার আর পানি একসাথে মেশান।
  • তারপর একটি কটন বল দিয়ে মিক্সচারটি পুরো মুখে বিশেষ করে একনে বা পিম্পল এর জায়গায় ভালো করে অ্যাপ্লাই করুন।
  • ১০ মিনিট রেখে ভালো করে শুকিয়ে এলে মুখ কুসুম গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
  • বেস্ট রেজাল্টের জন্য দিনে কয়েকবার করে টানা কয়েকদিন ব্যাবহার করুন।
  • আপনি চাইলে একটি স্প্রে বোতলে মিক্সচারটি বানিয়ে সারাদিনে কিছু সময় পরপর তা মুখে স্প্রে করে নিতে পারেন।

সানবার্ন দূর করতে

ডেইলি বাইরে যাওয়ার ফলে আমরা যতই কেয়ারফুল থাকি না কেনো স্কিনে সান ড্যামেজ হয়েই যায়। এর ফলে স্কিনে পিগমেন্টেশন দেখা দেয়। যা দ্রুতই স্কিনকে ডার্ক করে দেয় আর স্কিনকে করে তোলে সেন্সিটিভ। অ্যাপেল সিডার ভিনেগার রোদে পোড়া স্কিনে সুদিং ভাব দেয় এবং হাইড্রেশন দেয় যা স্কিনকে আস্তে আস্তে সান ড্যামেজ থেকে মুক্তি দেয়। 

  • একটি বাটিতে হাফ কাপ অ্যাপেল সিডার ভিনেগার আর ৪ কাপ পানি একসাথে মিশিয়ে ফেলুন।
  • একটি নরম পরিষ্কার কাপড় সেই মিক্সচারে ভিজিয়ে নিয়ে তা রোদে পোড়া স্কিনের উপর দিয়ে রাখুন। 
  • কিছু সময় রেখে সেই কাপড় দিয়েই স্কিনকে ভালোভাবে ম্যাসাজ করুন। 
  • প্রতিদিন বা একদিন পরপর এইভাবে ট্রিট্মেন্টটি নিতে থাকুন আর কিছুদিনেই দেখবের আপনার স্কিন হয়ে উঠবে ড্যামেজ ফ্রি, ব্রাইট এবং স্মুদ। এবং ত্বকের পিগমেন্টেশনও এইভাবে দূর হবে। 

স্কিন এক্সফোলিয়েশন এবং পি.এইচ.ব্যালেন্সে

অ্যাপেল সিডার ভিনেগারে থাকা আলফা হাইড্রক্সিল অ্যাসিড স্কিনের ডেড সেলসগুলোকে রিমুভ করে এবং স্কিনের নতুন সেলগুলোকে হেলদি রাখে। এছাড়াও এটি স্কিনের পি.এইচ. লেভেল ব্যালেন্সে সহায়ক। 

  • একটি বাথটাবে উষ্ণ গরম পানিতে কিছু পরিমানে অ্যাপেল সিডার ভিনেগার মিশিয়ে তাতে ২০ থেকে ২৫ মিনিটের জন্য অবস্থান করুন।
  • এতে করে পুরো বডির স্কিন অ্যাপেল সিডার ভিনেগার খুব ভালোভাবে সোক করে নিবে এবং আপনার স্কিনের পি.এইচ. লেভেল ব্যালেন্স করবে। যার ফলে স্কিন হয়ে উঠবে প্রাণবন্ত এবং উজ্জ্বল। 

টোনার হিসেবে

স্কিনের সুরক্ষায় ভালো একটা টোনার ব্যাবহার করা মাস্ট। এর জন্য অ্যাপেল সিডার ভিনেগার পানির সাথে মিশিয়ে আর সাথে কিছু এসেন্সিয়াল অয়েল মিশিয়ে বানিয়ে ফেলতে পারেন আপনার টোনারটি। এই টোনারটি অ্যাপ্লাই করার পর ১০ মিনিট রেখে ঠাণ্ডা পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলতে হবে।

অ্যাপেল সিডার ভিনেগারে থাকা অ্যাস্ট্রিজেন্ট প্রপারটিস স্কিনের ব্লাড সারকুলেশন ঠিক রাখে এবং ওপেন পোরস মিনিমাইজ করে। এছাড়াও এটি স্কিনে রিঙ্কেলস এবং প্রি-ম্যাচিউর এজিং হতে দেয় না।

আমি অনেক দিন ধরেই অ্যাপেল সিডার ভিনেগার ব্যাবহার করে আসছি স্কিনের নানান সমস্যায়। আর আমি নিয়মিত আর.এস অ্যাপেল সিডার ভিনেগার ব্যবহার করছি। আর দামে এবং মানে এটি আমার সবচেয়ে পছন্দের ব্র্যান্ডের অ্যাপেল সিডার ভিনেগার।

হেলদি ডায়েট হিসেবে অ্যাপেল সিডার ভিনেগার

যারা হয়তো ডায়েট করছেন তারা বিভিন্ন সালাদের ড্রেসিং হিসেবে ব্যাবহার করতে পারেন এই অ্যাপেল সিডার ভিনেগার। এটি শরীরের বাড়তি চর্বি থেকে মুক্তি দেয় এবং খাবার দেরিতে হজমে সাহায্য করে।

চুলের যত্নে অ্যাপেল সিডার ভিনেগার

এছাড়াও চুলের যত্নেও ব্যাবহার করা যাবে এই প্রডাক্ট। যাদের স্ক্যাল্প ড্রাই বা চুল অনেক রুক্ষ তারা পানির সাথে অ্যাপেল সিডার ভিনেগার মিশিয়ে চুলে স্প্রে করতে পারলে চুল ধীরে ধীরে হারানো প্রাণ ফিরে পাবে এবং হয়ে উঠবে ঝলমলে। 

মোটকথা অ্যাপেল সিডার ভিনেগার একটি অলরাউন্ডার। এতক্ষণে তো বুঝেই গিয়েছেন যে এমন কোনো সমস্যা নেই যাতে আপনি অ্যাপল সিডার ভিনেগার একটু হলেও ব্যাবহার করে উপকার পাবেন না। তাই আজই কিনে ফেলুন একটি অ্যাপেল সিডার ভিনেগারের বোতল আর ব্যাবহার করুন আপনার নানান সমস্যার সমাধান হিসেবে। আর কোন ব্র্যান্ড কিনবো বা কোনটা ভালো এগুলো নিয়ে কনফিউজড না হয়ে কিনে ফেলুন আর.এস অ্যাপেল সিডার ভিনেগার। কারণ এটি এই পর্যন্ত আমার ব্যাবহার করা বেস্ট অ্যাপেল সিডার ভিনেগার।

লিখেছেন –
রাবেয়া চৌধুরী পিয়া

Leave a Reply

Your email address will not be published.