আমরা সবসময়য়ই নিজেদের একটু প্যাম্পার করতে পছন্দ করি। এই প্যাম্পারিং অনেক রকমের হয়। হয়তো কখনো আমরা নিজেদের পছন্দের খাবার খেয়ে নিজেদের সেলফ ট্রিট দিয়ে প্যাম্পার করি, কখনো হয়তো পছন্দের মেকাপ কিনে নিজেদের গিফট দিয়ে প্যাম্পার করি আবার কখনো স্কিন কেয়ার করে স্কিনটাকে প্যাম্পার করে নিজেদের প্রেমে পড়ে যাই আরো বেশি। এখন স্কিনকে প্যাম্পারের ব্যাপারটা যখন আসে তখন আমরা শুধু মুখের স্কিনটারই একটু বাড়তি যত্ন নেই। কিন্তু আমাদের হাত-পা কিন্তু সমান রকমের যত্ন ডিজার্ভ করে। কারন মুখের ত্বকের জন্য আমরা নানান জিনিস ব্যাবহার করে যত্ন নিলেও হাত-পায়ের জন্য কিন্তু সেইভাবে কিছু করা হয় না। তাই যখন হাত-পায়ের যত্ন নেয়া হয় তা একটু বাড়তিভাবে নেয়া উচিত।
হাত-পায়ের যত্ন বলতে আমরা ম্যানিকিউর আর পেডিকিউর করাকেই বুঝি। আর অনেকেই ভাবে তা শুধু পার্লারে গিয়েই ভালোভাবে করা সম্ভব। কিন্তু এই ধারণা একদমই ভুল। কারণ আপনি ঘরে বসেই খুব সহজেই করে ফেলতে পারেন আপনার রেগুলার ম্যানিকিউর-পেডিকিউর। আর এই ম্যানিকিউর-পেডিকিউর কিন্তু আপনি ঘরে বসেই খুব সহজেই করে ফেলতে পারবেন।
ম্যানিকিউর-পেডিকিউর কেনো করবো? –
প্রতিদিন বিভিন্ন কাজ করার ফলে বা বাইরে যাওয়ার ফলে আমাদের হাত-পায়ে অনেক ময়লা জমে। যা হয়ত আমরা একদিনে দেখতে পাই না, তাই এগুলো নিয়ে আমাদের তেমন মাথা ব্যাথাও থাকেনা। কিন্তু এইভাবে ময়লা জমতে জমতে তা একসময় হাত-পা কালো করা শুরু করে। নখের চারদিকের পিগমেন্টেশন বাড়তে থাকে। এবং নখের ভিতর ময়লা জমে তা দেখতেও খুবই বিশ্রী দেখায়। তাই রেগুলার ম্যানিকিউর-পেডিকিউর করে যদি এই ময়লা বা হাত-পায়ের ডেড সেলসগুলো যদি ক্লিন করা হয় তাহলে হাত-পা থাকবে ব্রাইট, সফট আর স্মুদ।
নিয়ম –
ঘরে বসে ম্যানিকিউর বা পেডিকিউর করা কিন্তু খুবই সহজ। শুধু কিছু পদ্ধতি জানা থাকলেই তা করে ফেলা যাবে পারফেক্টলি। চলুন জেনে নেই কিছু নিয়মঃ
- প্রথমেই হাত-পায়ের নখে নেইলপলিশ থাকলে তা ভালো কোনো রিমুভার দিয়ে উঠিয়ে নিতে হবে। এই ক্ষেত্রে ফ্লোরমারের এক্সপার্ট নেইল পলিশ রিমুভার। কারন এই রিমুভারটি নখকে করে নারিশড এবং স্ট্রং।
- একটি বড় বালতিতে বা বোলে হালকা গরম পানি নিয়ে নিতে হবে।
- এরপর তাতে লবণ, সামান্য বেকিং সোডা বা লেবুর রস এবং শ্যাম্পু মিশাতে হবে।
- এই পানিতে এখন হাত এবং পা ১৫-২০ মিনিটের জন্য ভিজিয়ে রাখতে। এতে করে ডেড সেলসগুলো নরম হবে এবং সহজেই ক্লিন হবে।
- এই স্টেপে পিউবিক স্টোন দিয়ে পায়ের গোড়ালি থেকে শুরু করে পুরো পা আস্তে আস্তে ঘষতে হবে। আর হাতের ক্ষেত্রে পিউবিক স্টোন বা নরম ব্রাশ দিয়ে আস্তে আস্তে ঘষতে হবে।এবং কিউটিকেল পুশার দিয়ে কিউটিকেল গুলো পরিস্কার করতে হবে। ফ্লোরমার কিউটিকেল পুশারটি কিনে নিতে পারেন এই কাজের জন্য। এতে করে হাত-পায়ের নরম হয়ে যাওয়া ডেড সেলসগুলো উঠে আসবে খুব সহজেই।
- এরপর নখ পছন্দমতো শেইপে কেটে বাফার দিয়ে ফাইল করে নিতে হবে।
- এবার হাত-পা ভালো করে মুছে একটি স্ক্রাব অ্যাপ্লাই করতে হবে।
- স্ক্রাবিং-এর পর একটি প্যাক অ্যাপ্লাই করতে হবে। ২০-২৫ মিনিট তা রেখে ভালোভাবে ধুয়ে ফেলতে হবে।
- এরপর হাতে-পায়ে ময়েশ্চারাইজার অ্যাপ্লাই করতে হবে।
আর এই স্টেপগুলোর পর আরো পারফেক্ট ফিনিশিং পেতে ফ্লোরমারের ম্যানিকিউর সেটটি ব্যাবহার করতে পারেন। কারণ এই সেটে রয়েছে ম্যানিকিউর-পেডিকিউর করার পারফেক্ট টুলস গুলো। আমি নিজেও সবসময় এই সেটটি ব্যাবহার করি ঘরে বসে ম্যানিকিউর-পেডিকিউর করার ক্ষেত্রে।
ব্যস, দেখলেন তো কতো সহজেই ঘরে বসেই হয়ে গেলো আপনার ম্যানিকিউর-পেডিকিউর!
কিন্তু এখন ভাবতে পারেন কোন স্ক্রাব বা প্যাক ব্যাবহার করবেন বা কিভাবে তা বানাবেন।
আপনার সুবিধার জন্য শেয়ার করছি কয়েকটি ঘরে থাকা জিনিস দিয়েই বানানো যাবে এমন কিছু স্ক্রাব এবং ফেসপ্যাকের আইডিয়া।
স্ক্রাব –
১। অলিভ অয়েল এবং চিনির স্ক্রাবটি বেশ জনপ্রিয়। বানানোও খুব সোজা। এর জন্য একটি বাটিতে আপনার প্রয়োজনমতো পরিমাণে অলিভ অয়েল নিয়ে নিন। চিনি অলিভ অয়েলের পরিমাণ অনুযায়ী বুঝে নিয়ে মিক্স করে ফেলুন। তৈরি হয়ে গেলো আপনার স্ক্রাব। এই স্ক্রাব স্কিনের ডেড সেলস ক্লিন করার পাশাপাশি স্কিনকে করবে ময়েশ্চারাইজড। এই স্ক্রাবটি আমি যখনই বানাই, ব্যাবহার করি ক্ল্যারিস অলিভ অয়েল। কারণ এটি আমার কাছে আমার ব্যাবহার করা সবচেয়ে বেটার ঘনত্বের পারফেক্টলি ব্যালেন্সড অলিভ অয়েল। এছাড়াও আর এস- এর অলিভ অয়েলও ব্যাবহার করে দেখতে পারেন।
২। আলমণ্ড স্ক্রাব ব্রাইটেনিংয়ের জন্য অনেক উপকারি। এই স্ক্রাবটি বানাতে লাগবে ক্রাশড আলমন্ড, আলমন্ড অয়েল এবং সামান্য একটু মিল্ক পাউডার। এই উপকরনগুলো একসাথে মিক্স করে বানিয়ে ফেলুন আপনার স্ক্রাবটি। আলমন্ড অয়েলের জন্য ব্যাবহার করতে পারেন ক্ল্যারিস আলমন্ড অয়েল।
৩। মধু, কফি গুড়া এবং লেবুর রস- এই উপকরণগুলো একসাথে মিশিয়েও তৈরি করে ফেলতে পারেন অসাধারণ একটি স্ক্রাব। ক্ল্যারিসের হানি ব্যাবহার করতে পারেন এই ক্ষেত্রেও। খাওয়া বা যেকোনো ক্ষেত্রেই ক্ল্যারিসের হানি আমি ব্যাবহার করি অনেকদিন ধরে। ক্ল্যারিস হানির অনেক ধরনের ভ্যারিয়ান্টও রয়েছে।
বডিপ্যাক –
স্ক্রাবিং-এর পর স্কিনকে তার প্রয়োজনীয় নারিশমেন্ট দিতে ব্যাবহার করতে হবে একটি বডিপ্যাক। বডিপ্যাক স্কিনের সানট্যান রিমুভের পাশাপাশি স্কিনকে করবে ব্রাইট এবং সুপার সফট।
১। টকদই, কফি এবং মধু একসাথে মিশিয়ে মোটামুটি থিক একটি পেস্ট তৈরি করুন। এরপর তা হাতে এবং পায়ে অ্যাপ্লাই করে ২০ থেকে ২৫ মিনিট রেখে ভালো করে শুকিয়ে পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। স্কিনে আসবে ইন্সট্যান্ট ব্রাইটেনিং এবং স্মুদনেস।
২। বেসন, চালের গুড়ো, অলিভ অয়েল, টমেটোর রস এবং সামান্য পরিমাণে গুড়ো দুধ ভালোমতো মিশিয়ে নিয়ে হাতে-পায়ে কিছুখন ম্যাসাজ করুন।এরপর ১৫ থেকে ২০ মিনিটের জন্য শুকাতে দিন। পানি দিয়ে ভালো করে ধুয়ে ফেলুন। এই প্যাকটি সানট্যান রিমুভ করবে পাশাপাশি দিবে সফট গ্লোয়িং স্কিন।
৩। হলুদ গুড়ো, কাঁচা দুধ এবং মধু একসাথে মিশিয়ে প্যাক বানিয়ে অ্যাপ্লাই করুন। এই প্যাকটি স্কিন ব্রাইটেনিং এর ক্ষেত্রে বিশেষ উপকারি।
অলিভ অয়েল, আলমন্ড অয়েল বা মধু – যেটাই ব্যাবহার করা হোক না কেনো আমার সবচেয়ে আস্থার এবং পছন্দের ব্র্যান্ড হচ্ছে ক্ল্যারিস।
এইতো গেলো বডিপ্যাক নিয়ে কথা। কিন্ত বডিপ্যাক অ্যাপ্লাই করে স্কিন ময়েশ্চারাইজড করতে ভুলে গেলে কিন্তু হবে না। একটি ভালো ময়েশ্চারাইজিং লোশন ব্যাবহার করতে হবে ম্যানিকিউর-পেডিকিউরের লাস্ট স্টেপ হিসেবে। আসলে শুধু ম্যানিকিউর-পেডিকিউর না, রেগুলার উচিত ভালোভাবে স্কিনকে ময়েশ্চারাইজড করা।
এর জন্য ব্যাবহার করে দেখতে পারেন আর্থ বিউটি এন্ড ইউ ব্র্যান্ডের লোশনগুলো। বাজেটের মধ্যে এই লোশনগুলো বেস্ট আমি বলবো।
আর্থ বিউটি এন্ড ইউ এর ভিটামিন ই ময়েশ্চারাইজিং বডি মিল্ক। এতে থাকা ভিটামিন ই ফরমুলা এবং অ্যালগি এক্সট্র্যাক্ট স্কিনে দিবে হাইড্রেশন এবং পারফেক্ট ময়েশ্চারাইজেশন। এছাড়াও অ্যালগি এক্সট্র্যাক্ট হাত-পায়ের স্কিনের প্রি-ম্যাচিওর এজিংও রোধ করতে সাহায্য করে।
আবার যাদের হাত-পায়ের স্কিন টোন মুখের স্কিন টোনের সাথে ম্যাচ করেনা তারা ব্যাবহার করতে পারেন আর্থ বিউটি এন্ড ইউ- এর ভিটামিন সি হোয়াইটেনিং বডি মিল্ক। এর ভিটামিন সি এক্সট্যাক্ট হাত-পায়ের স্কিন করবে ব্রাইট এবং আস্তে আস্তে তা মুখের স্কিন টোনের সাথে ম্যাচ হবে।
নিশ্চয়ই এতক্ষণে বুঝে গিয়েছেন যে কতো সহজেই পার্লারে হাজার হাজার টাকা খরচ না করে ঘরে বসেই করে ফেলতে পারেন আপনার হাত-পায়ের ম্যানিকিউর-পেডিকিউর!! এতে হাত-পা থাকবে সবসময় ক্লিন আর আকর্ষণীয়।
লিখেছেন –
রাবেয়া চৌধুরী পিয়া