Hair Care

সুস্থ চুলের টিপস অ্যান্ড ট্রিক্স

সুস্থ চুলের টিপস অ্যান্ড ট্রিক্স

আমাদের সৌন্দর্য্যের প্রধান মাপকাঠি হিসেবে চুলকেই ধরা যায়! লম্বা চুল নিয়ে রূপকথার গল্প থেকে শুরু করে মহাকাব্য পর্যন্ত কত কি লেখা হয়েছে, তার ইয়ত্তা নেই! নানি দাদিদের মুখে বলতে শুনেছি চুলেই নাকি মেয়েদের আসল সৌন্দর্য। ছেলে হন বা মেয়ে, ট্রেডিশনাল হন বা হাল ফ্যাশনের সাথে তাল মিলিয়ে চলা মানুষ, চুলের যত্নটা কিন্তু সবারই নেয়া প্রয়োজন। চুলের আসল সৌন্দর্য নির্ভর করে চুলের স্বাস্থ্যের উপর! আমার কাছে হেলদি চুল মানেই সুন্দর চুল।

তাই আজকে লিখতে বসেছি সুস্থ চুলের জন্য কিছু টিপস অ্যান্ড ট্রিক্স!

 

চুল যেমনি হোক, আমরা অনেকেই কিন্তু চুলে বিভিন্ন ধরনের স্টাইল করতে পছন্দ করি। কিন্তু এই শখের চুলের যত্নে আমরা কতটুকুই বা সময় দিই? অথচ প্রতিদিন একটু সময় দিলেই কিন্তু চুল থাকবে স্বাস্থ্যকর আর সুন্দর!

 

চুলের দৈনন্দিন যত্ন

সবার চুলের ধরন যেমন সেইম না তেমনি ধরনের উপর ভিত্তি করে এর সলিউশন ও ভিন্ন। চুলের জন্য রয়েছে বিভিন্ন ধরনের হেয়ার প্যাক, হেয়ার মাস্ক, শ্যাম্পু, কনডিশনার, ক্যাস্টর তেল, অলিভ অয়েল ইত্যাদি।

 

চিরুনি

দিনে ২ থেকে ৩ বার নিয়ম করে হেয়ার ব্রাশ দিয়ে চুল আচড়ে নিন। চুলের জন্য মোটা দাঁতের চিরুনি অথবা কাঠের চিরুনি বিশেষভাবে উপকারী। রাতে ঘুমানোর আগে চুল আঁচড়ে একটা বেনী অথবা উচু খোঁপা করে নিন। এতে করে চুলের আগা থাকবে প্রোটেক্টেড।

 

হেয়ারপ্যাক

চুলকে ভালো রাখার জন্য ধরন বুঝে হেয়ার প্যাক ব্যবহার করা উচিত। স্ক্যাল্প শুষ্ক বা কম্বিনেশন হলে ১০ থেকে ১৫ দিন পরপর, এবং তৈলাক্ত টাইপের  হলে ১৫ দিন পর পর চুলে প্যাক লাগানো ভালো।

 

কন্ডিশনার

প্রতিবার শ্যাম্পুর পর একটি ময়েশ্চারাইজিং কন্ডিশনার লাগান। কন্ডিশনার আপনার চুলের স্ট্র্যান্ডগুলিকে একটা আর্দ্রতার কোটিং দেয়। এতে চুলের আগা ফাটার প্রবণতা কমে যায়।

মনে রাখবেন কন্ডিশনার কখনোই স্ক্যাল্পে ব্যবহার করবেন না। অল্প পরিমান নিয়ে চুলের আগায় মাসাজ করলেই যথেষ্ট।

 

চুল কেন পরে?

ইদানিং দেখা যাচ্ছে আমাদের সবারই চুল নিয়ে অনেক ধরনের সম্যসা। এর মধ্যে সিংহ ভাগ সমস্যা হচ্ছে চুল পরা নিয়ে! চুল কেন পরে তা জানেন তো? রিসার্চাররা বলেন, যখুনি চুলের উপর কোন স্ট্রেস পড়ে, তখুনি চুল পরার প্রবণতা দেখা যায়। এই স্ট্রেস হতে পারে বাহ্যিক অথবা অভ্যন্তরীণ।

বাংলাদেশে বাড়ছে ধুলাবালি আর সিজনাল চেঞ্জ তো আছেই! এর কারনে চুলে আসে নানা ধরনের পরিবর্তন। এই পরিবর্তনটা আমাদের শরীর ডিটেক্ট করে স্ট্রেস হিসেবে! আর সেই স্ট্রেস এর প্রভাব পরে চুলে। তাছাড়া টেনশন, খাদ্যাভ্যাস এবং অযত্ন তো আছেই। এছাড়াও বড় কোন শারীরিক পরিবর্তন যেমন প্রেগন্যান্সি বা অসুস্থতার কারণেও চুল পড়ে।

 

আমি কিভাবে প্রাকৃতিকভাবে চুল পড়া কমাতে পারি?

তেল

আমার নানি বলতো “জলে চুন তাজা, তেলে চুল তাজা!”

চুল ভাল রাখতে তেলের কোন বিকল্প নেই! তেলের পছন্দের তালিকায় প্রথমেই থাকবে অলিভ অয়েল।

আপনার চুল এবং স্ক্যাল্পে ম্যাসাজ করার আগে একটি পাত্রে অলিভ অয়েল এবং নারকেল তেল একসাথে গরম করে নিন (১/২ কাপ অলিভ অয়েল এর সাথে ১ কাপ ভার্জিন নারকেল তেল)। তুলো ভিজিয়ে সিঁথি কেটে পুরো স্ক্যাল্প এবং চুলের আগা পর্যন্ত তেল দিন। ১ থেকে দেড় ঘন্টা রাখলেই যথেষ্ট। এরপর পছন্দের শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে নিন। নিয়ম করে তেল দিলে চুলের গোড়া শক্ত তো হবেই সেই সাথে নরম রেশমি একটা ভাব আসবে!

 

মাসাজ

হেয়ার মাসাজ চুলের যত্নের সবচেয়ে পুরনো পদ্ধতি গুলোর মধ্যে একটি। তেল দিয়ে স্ক্যাল্প মাসাজ করলে যেমন আরাম পাওয়া যায়, ঠিক তেমনি রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি পায়। যা পরবর্তীতে চুলের গ্রোথে সাহায্য করে। সপ্তাহে একবার হেয়ার মাসাজ করলে  চুলের যত্নের পাশাপাশি স্ট্রেস রিলিফ ও কিন্তু হয়ে যায়।

 

খাদ্যাভ্যাস

আমাদের সৌন্দর্যের মূল চাবিকাঠি হচ্ছে খাবার। বলে না? “You are what you eat”

ভিটামিন এ, বি, সি, ডি, ই, জিঙ্ক এবং আয়রনের মতো কিছু ভিটামিন এবং খনিজ উপাদান যুক্ত খাবার আপনার চুলের বৃদ্ধিকে প্রভাবিত করতে পারে। আমাদের শরীরে প্রতিদিন ৪০ থেকে ৬০ গ্রাম প্রোটিন প্রয়োজন। মটরশুটি এবং শিম, ডিম, দই এ আছে প্রচুর প্রোটিন। খেয়াল রাখবেন এই খাবার গুলো বাদ পড়ে যাছে কিনা। কাজেই আমরা প্রতিদিনের খাবারের তালিকায় কি রাখছি সেটা বিশেষ ভাবে আমাদের চুল ত্বক স্বাস্থ্যের উপর প্রভাব ফেলে।

 

হেয়ার স্টাইলিং

যুগের সাথে পালা বদল করে বদলাচ্ছে চুলের স্টাইল। কারো খুব ফাংকি হেয়ার কালার পছন্দ তো কারও অমব্রে হাইলাইটস। কারও রিবন্ডিং করা চুল পছন্দ তো কারো কার্ল ছাড়া হেয়ারস্টাইল জমেই না! কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্যি এই হেয়ার স্টাইল করতে গিয়ে কিন্তু আমরা অনেক সময়ই চুলের ক্ষতি করে ফেলছি! ফলাফল চুল পড়া, চুল রাফ হয়ে যাওয়া, আগা ফেতে যাওয়া। তাই চেষ্টা করবো যেন হিট স্টাইলিং করার আগে অবশ্যই একটা হিট প্রোটেক্ট্যান্ট স্প্রে ব্যবহার করতে। হেয়ার ডাই, ব্লিচিং, কেমিক্যাল প্রসেসিং এর মতো ব্যপার গুলো এড়িয়ে চলতে পারলে ভাল। কিন্তু এড়ানো সম্ভব না হলে অন্তত এক্সপার্ট এর পরামর্শ অনুযায়ী চুলের যত নিতে যেন ভুল না হয়।

 

 

 

ডিট্যাংলার

যাদের চুল অল্পতেই জট ধরে যায়, তারা লিভ-ইন কন্ডিশনার বা ডিট্যাংলার ব্যবহার করতে পারেন। আপনার চুল ধোয়ার এবং কন্ডিশন করার পর চুল হালকা ভেজা থাকা অবস্থায় লিভ ইন কন্ডিশনার দিয়ে মাসাজ করে, ডিট্যাংলার দিয়ে আঁচড়ে নিলে চুল থাকবে জটমুক্ত অ্যান্ড ম্যানেজড! চুল শাইনি আর সফট করতেও এটা সাহায্য করে।

 

 

খুশকি ও তার সমাধান

শীতকালে খুশকি সাধারণত স্ক্যাল্পের শুষ্কতার কারণে হয়। ম্যালাসেজিয়া গ্লোবসা নামের এক ধরনের ছত্রাকের আক্রমনে খুশকি হয়। ওক্যাল্পের রুক্ষতা, ম্যালাসেজিয়া আর বাতাসের ধুলাবালি সব মিলিয়ে একটা যাচ্ছেতাই অবস্থার নামই খুশকি! আর খুশকি চুল পরার সাথে একদম সরাসরি জড়িত।

খুশকি থেকে বাঁচতে কিছু ব্যাপার খেয়াল রাখতে হবে-

 

(১) আমন্ড অয়েলের সাথে কয়েক ফোঁটা লেবুর রস মিশিয়ে খুশকির জায়গা গুলো মাসাজ করুন। এক ঘন্টা অপেক্ষা করে চুলে শ্যাম্পু করুন।

 

(২) ঘৃতকুমারী বা অ্যালোভেরা একটা ম্যাজিক পোশনের মতো কাজ করে খুশকি এবং চুল পড়ার ক্ষেত্রে!। অ্যালোভেরা জেল ব্লেন্ড করে নিয়ে চুলে এবং স্ক্যাল্পে লাগালে খুশকি তো হার মানবেই, সেই সাথে চুলও হবে ঘন আর সিল্কি।

 

(২) এক চতুর্থাংশ কাপে আপেল সিডার ভিনেগার এক চতুর্থাংশ কাপ জলের সাথে মিশিয়ে আপনার মাথার ত্বকে ব্যবহার করুন। স্প্রে বোতলে ভরে স্প্রে করতে পারেন অথবা তুলোতে ভিজিয়েও লাগাতে পারেন। খুশকি দূর হবে আর চুলে একটা ঝরঝরে ভাব নিয়ে আসবে।

 

 

চুল ড্যামেজ হওয়ার কারণ কী?

হার্শ শ্যাম্পু, ভুল হেয়ার ট্রিটমেন্ট, অতিরিক্ত হিট স্টাইলিং, নকল প্রোডাক্ট এবং অতিরিক্ত ব্রাশিং চুলের স্বাস্থ্যের জন্য সবচেয়ে বেশি ক্ষতিকর। অন্যান্য অপরাধীদের মধ্যে রয়েছে: ক্র্যাশ ডায়েট, ঘুম কম হওয়া, পানি

 

ড্যামেজ রিপেয়ার হেয়ার মাস্ক রেসিপিঃ

(১) একটি পাত্রে অ্যালোভেরা জেলের সঙ্গে ক্যাস্টর অয়েল মিশিয়ে নিন। এটি একটি পেস্টে রূপান্তর করতে ভালোভাবে নাড়ুন। এই পেস্টটি আপনার চুল এবং মাথার ত্বকে আলতোভাবে লাগান।

(২)

তিন চা চামচ ফ্রেশ অ্যালোভেরা জেলের সাথে দুই চা চামচ দই এক চা চামচ মধু এবং এক চা চামচ অলিভ অয়েল মিশিয়ে নিন।

ভালো করে মিশিয়ে চুল ও মাথার ত্বকে লাগান। মিশ্রণটি মাথার ত্বকে ১০ মিনিটের জন্য ভালভাবে ম্যাসাজ করুন। আধা ঘন্টা রেখে শ্যাম্পু ফেলুন।

(৩)

আধা কাপ দইয়ের সাথে এক টেবিল চামচ বাদাম তেল ব্লেন্ড করুন। শুষ্ক চুলে প্রয়োগ করুন এবং গোড়া থেকে আগা পর্যন্ত ছড়িয়ে দিন। ৩০ মিনিট পর্যন্ত চুলে রেখে দিন। আপনি শাওয়ার ক্যাপ দিয়ে আপনার চুল ঢেকে রাখতে চাইতে পারেন।

উপকরণগুলো তো আমাদের ঘরে থাকেই। কিন্তু আমি একটু খুঁতখুঁতে কিনা!

চুলে  যা-তা পণ্য ব্যবহার না করে ভাল ব্র্যান্ড বেঁছে নেয়াটাই বুদ্ধিমানের কাজ বলে আমি মনে করি। আমার পারসোনাল ফেভারিট হলো ক্ল্যারিস এর ক্যাস্টর অয়েল এবং অ্যামন্ড অয়েল আর ক্ল্যারিস ন্যাচেরাল মধু। অলিভ অয়েল এর জন্য মি প্রেফার করি রাফায়েল সাল্গাডো বা আর এস ব্র্যান্ডটি। আর এস এর অ্যাপল সাইডার ভিনেগারটাও বেশ ভালো।

এভাবে আপনারা চাইলেই ঘরে বসে বিভিন্ন প্যাক অথবা মাস্ক বানিয়ে নিয়ে চুলে অ্যাপ্লাই করতে পারেন এবং ব্যবহার এর পর খুব দ্রুত আপনার চুলের ভাল একটা পরিবর্তন দেখতে পারবেন। প্রতিদিনের যত্নে আপনার চুল থাকুক সুস্থ ও সুন্দর।

 

 

লিখেছেন
নাফিসা নুসরাত নূর 

 

 

Leave a Reply

Your email address will not be published.