Hair Care

চুল পড়া কমানোর নতুন উপায়

 

পৃথিবী জুড়ে অসংখ্য মানুষকে একটি সাধারণ সমস্যার সম্মুখীন হতে হয় যা হচ্ছে চুল ঝরে পরার সমস্যা যা খুবই স্বাভাবিক। দৈনিক প্রায় ১০০ টি  চুল ঝরে পরে।আর এক সময় তা আমাদের দূরচিন্তার কারন হয়ে পড়ে।দুশ্চিন্তা দূর করার জন্য আমরা  চুল পরা বন্ধের উপায় নিয়ে জানব।

অস্বাস্থ্যকর জীবনযাপন ও দূষণের কারণে আজকাল অতিরিক্ত চুল পড়ার সমস্যা দেখা দিচ্ছে। বিভিন্ন ব্র্যান্ডের দামি পণ্য ব্যবহারের পরও চুল পড়া কমছে না। যার কারণ বেশির ভাগ চুলের তেলেই নানা রকম কেমিক্যাল মিশ্রিত অবস্তায় থাকে।

এতে স্বাভাবিক তেলের সঙ্গে প্যারাফিন, মিনারেল ওয়েল আর অনেক ক্ষেত্রে ক্ষতিকারক কেমিক্যালও ব্যবহার হয়। ফলে তেলের স্বাভাবিক গুণাবলি কমতে থাকে। যা চুল পড়ার সমাধান না দিয়ে উল্টো আমাদের চুলের ও স্ক্যাল্পের ক্ষতি করে থাকে।

 

আসুন যেনে নেই কিভাবে এ থেকে পরিত্রান পেতে পারি এবং চুলের যত্ন নেয়া যায়।-

*আমাদের মাথার ত্বকে রক্তের সঞ্চালন কম থাকে যার ফলে অনেক সময় চুল ঝড়ে পড়ে থাকে।  রক্তসঞ্চালন বাড়াতে তেল ব্যবহারের বিকল্প নেই। মাথার ত্বকের সঙ্গে মানানসই এরকম তেল সপ্তাহে অন্তত একবার মাথায় দেওয়া যেতে পারে।

তেল ব্যবহারের পরে অন্তত দুই ঘন্টা ‘শাওয়ার ক্যাপ’ পরে থাকতে হবে।  তারপর চুল হালকা শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে।

 

* মাথার ত্বক বুঝে শ্যাম্পু করতে হবে। মাথার ত্বক তৈলাক্ত হলে সপ্তাহে দু-তিনবার পরিষ্কার করা প্রয়োজন।ত্বক শুষ্ক হলে শ্যাম্পু কম করাই ভালো। শ্যাম্পু বেশিক্ষণ মাথায় দিয়ে রাখা ঠিক না।  এতে চুলের গোরা নরম হয়ে যায়।

* আমরা যারা নিয়মিত ওয়ার্ক আউট করি, তাদের মাথার ত্বকে রক্ত সঞ্চালন ঠিক থাকে আর চুলও কম পড়ে। নিয়মিত ওয়ার্ক আউট-ও করা জেতে পারে চুলের সুরক্ষার জন্য।

 

* আমরা যতই আমাদের চুলের যত্ন নেই না কেন যদি খাদ্যতালিকায় পুষ্টিকর খাবার না রাখি, তবে চুল ধরে রাখা কঠিন হয়ে পরে।  তাই প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন ও লৌহ জাতীয় খাবার রোজ খাদ্যতালিকায় রাখা উচিত।

 

* সব কন্ডিশনার চুলে ব্যবহার করা সঠিক নয়। মাইল্ড কন্ডিশনার চুলের জন্য উপকারী ।এতে থাকে অ্যামিনো অ্যাসিড যা ক্ষয় পূরণ করে এবং চুলকে মসৃণ করে তোলে।

 

* চুল স্ট্রেট করা এবং রঙ করা চুলের জন্য দীর্ঘমেয়াদে ক্ষতি বয়ে আনতে পারে। এ ছাড়া ভেজা চুলে ‘ব্লো ড্রায়ার’ ব্যবহার ঠিক নয়। এগুলো চুলের ভঙ্গুরতা সৃষ্টি করে।

 

* চুল বড় হলে আগা ফেটে যায় তাই নিয়মিত চুলের আগা কেটে ফেলতে হবে।

 

 

তা ছাড়াও চুল পড়া কমানোর জন্য নিম্নোক্ত বিষয় গুলো বিশেষভাবে খেয়াল রাখা যেতে পারে-

১. দৈনিক চুল ধোয়ার জন্য হালকা শ্যম্পুর ব্যবহার করা   

অধিক পরিমাণে চুল ঝরে পরা কমানোর জন্য সব সময় চুল এবং মাথার ত্বক পরিস্কার রাখার জন্য বলা হয়ে থাকে যার জন্য দৈনিক চুল ধোয়া প্রয়োজন।

রোজ চুল ধোয়া মাথার ত্বকে সংক্রমণের ঝুঁকি এবং খুশকি কমিয়ে দেয়। কারণ খুশকি আমাদের চুল ঝরে পরার মূল কারণ।

 

২. দৈনিক খাবারে ভিটামিন গ্রহণের পরিমাণ বাড়িয়ে দেওয়া

ভিটামিনকে শুধুমাত্র সারা দেহের জন্যই কার্যকর মনে করা হয় না বরং চুলের জন্যও তা বিশেষ প্রযোজ্য। বিশেষত মাথার ত্বকের জন্য ভিটামিন এ কে প্রয়োজনীয় মনে করা হয়।

আরেকটি হল ভিটামিন ই যা মাথার ত্বকে রক্ত ভাল ভাবে সংবহনে সহায়তা করে যার ফলে চুলের কোষ বৃদ্ধির মাধ্যমে আরও বেশী চুল গজায়। এছাড়াও চুলের রঙ বজায় রাখার জন্য ভিটামিন বি এর গ্রহণ বাড়িয়ে দেয়ার জন্য বলা হয়।

 

৩. মাথা ঘামতে না দেওয়া

যাদের মাথার চামড়া তেলতেলে হয় তাদের খুসকি সমস্যা হতে দেখা যায়। তাই এ কারণে চুলের ঝরে পরার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। খুসকি প্রতিরোধ করতে অ্যালোভেরা এবং নিম সমৃদ্ধ শ্যাম্পু চুলে ব্যবহার করার জন্য বলা হয়ে থাকে। আমরা যারা নিয়মিত হেলমেট পরি তাদেরকে চুল ঝরে পরা সমস্যায় ভুগতে বেশী দেখা যায়।

এর কারণ বদ্ধ অবস্থায় মাথার চামড়া ভেজা থাকলে চুলের কোষগুলি বন্ধ হয়ে যায় ফলে চুল ঝরে পরে। হেলমেট পরার কোন বিকল্প না থাকলে মাথায় স্কার্ফ বেধে তারপর হেলমেট পরে চুল ঝরে পরার সমস্যা কমানো যায়।

 

৪. খাদ্য তালিকায় প্রোটিনের পরিমাণ বাড়ানো

চুলের বৃদ্ধির জন্য প্রোটিনের প্রয়োজন যা মাছ, চর্বি বিহীন মাংস এবং আরও বিভিন্ন ধরনের খাদ্যে পাওয়া যায়,প্রোটিন গ্রহনের ফলে চুল ঝরে পরা প্রতিরোধ করা সম্ভব।

 

৫. পিঁয়াজ, আদা বা রসুনের রস স্কাল্পে ব্যাবহার 

পিঁয়াজ, আদা বা রসুনের যে কোন একটির রস বানিয়ে মাথার চামড়াতে ভাল করে ঘষে মেখে সমস্ত রাত রেখে দেই। সকালে ধুয়ে পরিস্কার করে ফেলি।

এটি যদি অন্তত এক সপ্তাহ দৈনিক ব্যবহার করা হয় তবে চুল ঝরে না পরার ক্ষেত্রে ভাল ফলাফল পাওয়া যাবে।

 

৬. ম্যসাজের জন্য অ্যামাণ্ড ওয়েল ব্যবহার করা

যারা আগে থেকেই চুল ঝরে পরা সমস্যায় ভুগছি তারা অ্যামাণ্ড ওয়েল দিয়ে মাথার ত্বক কয়েক মিনিট ধরে ম্যাসেজ করে দেখতে পারি। সরিষার তেল বা নারিকেল তেলের মত অ্যামাণ্ড ওয়েল

ব্যবহার করলে আমি নিশ্চিত অন্য তেল গুলর তুলনায় এটির ফলাফল অনেক ভাল হবে। এই তেল ব্যবহারের ফলে চুলের গোঁড়ার কোষ সমূহ দীর্ঘ সময়ের জন্য একটিভ  থাকে জা আমাদের চুলের গ্রথ বারায়।

 

৭. ভেজা চুলে চিরুনি ব্যবহার না করা  

যখন চুল পানিতে ভেজা থাকে তা সবচেয়ে দুর্বল অবস্থায় থাকে তাই ভেজা চুলে চিরুনি ব্যাবহার করলে চুলের ঝরে পরার পরিমাণও বেড়ে যায়। তাই ভেজা চুলে চিরুনি না ব্যবহার করাই ভাল। যদি কখনো ভেজা চুলে আচরানর প্রয়োজন হয় তবে চওড়া দাঁত বিশিষ্ট চিরুনি ব্যবহার করা যেতে পারে। যেহেতু অতিরিক্ত আঁচড়ানো চুলের ক্ষতির কারণ এবং চুল ঝরে পরার কারণ  তাই এতে কোন জট পরলে চুলের ভেতর আঙ্গুল চালিয়ে তা ছাড়িয়ে নেয়ার চেষ্টা করতে বলা হয়ে থাকে।

 

৮. পানি গ্রহণের মাত্রা বাড়িয়ে দেওয়া

প্রতি গোছা চুলে বেশ পরিমাণে পানি থাকে এজন্য নিয়মিত পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করার জন্য বলা হয়। এতে করে চুলে পানির সঠিক পরিমাণ বজায় থাকে এবং চুলের স্বাস্থ্য রক্ষায় সুনিশ্চিত হওয়া যায়।

 

৯. গ্রিন টি

একটি জরিপে দেখা গেছে যে চুলে গ্রিন টি  ঘষে চুল ঝরে পরার চিকিৎসা করা যায়। এর জন্য প্রয়োজন শুধুমাত্র দুইটি টি ব্যাগ। টি ব্যাগ দুটি কাপে নিয়ে তাতে ফুটন্ত পানি দেই।

এর পর তা ঠাণ্ডা হলে চুলে প্রয়োগ করি। ধুয়ে ফেলার পূর্বে অন্তত এক ঘণ্টা অপেক্ষা করি। ভাল ফলাফল পেতে অন্তত এক সপ্তাহ ধরে বা আমাদের প্রয়োজন অনুযায়ী এর বেশী সময় ধরে এ পদ্ধতি ব্যবহার করা যেতে পারে।

 

১০. নিয়মিত শরীরচর্চা

দৈনিক কিছু সময় নিয়মিত শারীরিক কার্যক্রম করলে, যা হতে পারে অন্তত আধ ঘণ্টার জন্য হাঁটাহাঁটি বা সাঁতার কাটা, শরীরের হরমোনের ভারসাম্য সঠিক থাকে এবং একই সাথে মানসিক চাপ

এবং চুল ঝরে পরা কমায়। তাই নিয়মিত ভাবে এ ধরণের কাজ করার জন্য বলা হয়ে থাকে।

 

১১.ক্যাস্টর ওয়েল ব্যবহার

নিয়মিত অন্য যে কোন ওয়েল এর সাথে কিছু পরিমান ক্যাস্টর ওয়েল মিশিয়ে চুলে অ্যাপ্লাই করলে এর ফল আপনি নিজেই বুঝতে পারবেন। চুল ঝরে পরা বন্ধ করার জন্য সপ্তাহে একবার করে রেগুলার তেলের সাথে ক্যাস্টর ওয়েল ব্যবহার করা উচিত।

 

১২.অলিভ ওয়েল

চুলে অলিভ ওয়েল চুলের বৃদ্ধি এবং স্বাস্থ্যকে বজায় রাখে এটি হরমোন ডাইহাইড্রোটেস্টোস্টেরন বা ডি এইচ টি-কে বাঁধা দেয় যা চুল পড়া কমাতে সাহায্য করে এবং অলিভ ওয়েলে রয়েছে অ্যান্টিফাঙ্গাল বৈশিষ্ট্য যা চুলের ত্বককে ময়েশ্চারাইজার করে।

 

তবে হ্যাঁ চুল আমাদের অনেক প্রিয় একটি জিনিস। তাই চুল এ কোন পণ্য ব্যবহার করার আগে আমাদের খুব সাবধানে বুঝে শুনে ব্যবহার করা উচিত। বাজারের সকল পণ্য যেহেতু আসল নই তাই খুব সাবধানে ব্র্যান্ড বুঝে আমদের পন্ন নির্বাচন করা উচিত। ক্ল্যারিস অথবা আর এস অলিভ ওয়েল অথবা ক্ল্যারিস অ্যামান্ড ওয়েল অনেক খাটি যা ব্যবহারের ফলে আমি আমার চুল পরা বন্ধ করতে পেরেছি। ক্ল্যারিস ক্যাস্টর ওয়েল আমি সপ্তাহে একবার করে ব্যবহার করে অনেক উপকার পেয়েছি।

 

লিখেছেন –
নাফিসা নুসরাত নূর

 

 

Leave a Reply

Your email address will not be published.