ছোটবেলা থেকেই আমরা আমাদের দাদী,নানি,মা,খালাদের দেখে বড় হই যে উনারা রূপচর্চায় ব্যাবহার করেন কাঁচা হলুদ বাটা, মসুরের ডাল বাটা,অ্যালোভেরা বা এই ধরনের সব প্রাকৃতিক জিনিসে বানানো বিভিন্ন ফেসপ্যাক। তাদের সময় তারা হাজার হাজার টাকার ময়েশ্চারাইজার না কিনে ত্বক কোমল রাখতে ব্যবহার করতেন মধু বা অলিভ অয়েলের মতো জিনিস। ফলে তাদের ত্বক থাকতো চিরসবুজ।
কিন্তু কালের পরিবর্তনে আমরা ধিরে ধিরে ওইসব প্রাকৃতিক রূপচর্চার উপাদানগুলো থেকে বের হয়ে এসে এক্সপেরিমেন্ট চালাই হাজার হাজার টাকার বিভিন্ন ধরনের স্কিন কেয়ার প্রডাক্ট কিনে। ফলাফলে বেশিরভাগ সময়ই দেখা যায় প্রোডাক্ট স্কিনে স্যুট না করলে স্কিনে নানা রকম সমস্যা দেখা দেয়।
আর কেমিক্যাল প্রডাক্টের মাধ্যমে হওয়া ড্যামেজ স্কিনে ভেতর থেকে ক্ষতি করে যা ঠিক হতে অনেক সময় লাগে বা অনেক সময় ঠিক হলেও দাগ থেকেই যায়।
আবার নিজের স্কিন টাইপ না বুঝে কোনো কেমিক্যাল প্রোডাক্ট ব্যাবহার করলে তা স্যুট না হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। অনেক মানুষই স্কিন টাইপ না বুঝে প্রোডাক্ট ব্যবহার করেই স্কিনের সমস্যায় ভুগেন।
তাই স্কিন কেয়ারে সবচেয়ে নিরাপদ হলো প্রাকৃতিক উপাদান ব্যাবহার করা। কারণ প্রাকৃতিক উপাদান স্কিনের কোনো ক্ষতি করে না আর ধীরে ধীরে স্কিনকে করে তোলে লাবণ্যময়, উজ্জ্বল এবং কোমল।
রূপচর্চায় প্রাকৃতিক উপাদান ব্যাবহার করলে আপনি খুব সহজে ঘরে থাকা নানান জিনিস দিয়েই বানিয়ে ফেলতে পারবেন আপনার প্রয়োজনীয় ফেসপ্যাকটি বা স্কিন কেয়ারের যেকোনো জিনিস। প্রাকৃতিক উপাদান ব্যাবহার করে ত্বকে যেই ফলাফল পাওয়া যায় তা সবসময় থাকে বা সহজে চলে যায় না।
শুষ্ক ত্বক বা ড্রাই স্কিনের যত্নে প্রাকৃতিক উপাদান
যাদের ত্বক ড্রাই হয় তাদের ত্বকের সিবাম উৎপাদন স্বাভাবিকের চেয়ে কম হয়। সিবাম ত্বকের ন্যাচারাল ময়েশ্চার বজায় রাখে। কিন্তু এই সিবামের উৎপাদন কম হওয়া যেমন ভালো না তেমনি বেশি হওয়াও ভালো না।
তাই যাদের ত্বক ড্রাই তাদের সিবাম ব্যালেন্সড রাখতে বা ত্বকের ময়েশ্চার ব্যালেন্সড রাখতে ত্বকে এমন কিছু ব্যাবহার করা উচিত যার মাধ্যমে ত্বক থাকবে হাইড্রেটেড এবং ভেতর থেকে ত্বককে করবে সফট।
আর এর জন্য বেস্ট হচ্ছে হানি বা মধু ব্যাবহার করা। মধু এমন একটি প্রাকৃতিক উপাদান যার অনেক অনেক উপকারি দিক রয়েছে। ত্বকের যত্নে যুগ যুগ ধরে মধু ব্যাবহার হয়ে আসছে।
মধু এবং লেবুর রস একসাথে মিশিয়ে মুখে দিলে ত্বক হয় ভেতর থেকে উজ্জ্বল, কোমল। এটি ত্বকের জন্য একধরনের ন্যাচারাল ব্লিচ হিসাবেও কাজ করে যেটার কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই।
কিন্তু মধু বা হানি হতে হবে একদম খাঁটি এবং ভেজালমুক্ত। আর এর জন্য বেস্ট হবে ক্ল্যারিস হানি। ক্ল্যারিস হানি আপনাকে দেয় ১০০% খাঁটি মধুর নিশ্চয়তা যা রূপচর্চায় ব্যাবহার করলে ত্বক নিয়ে আর কোনো চিন্তা থাকবে না।
আবার শুষ্ক ত্বকে রেগুলার স্ক্রাবিং করা খুব জরুরি কারণ শুষ্কতার কারণে ত্বক দেখায় প্যাচি বা ত্বকের মৃত কোষগুলো ভেসে থাকে মুখে। তাই ড্রাই স্কিনের জন্য দরকার এমন কোনো স্ক্রাব যা স্কিনকে আরো ড্রাই না করে ক্লিন করবে ত্বকের ময়েশ্চার ধরে রেখে। আর এর জন্য ব্যাবহার করা যেতে পারে বিভিন্ন হোমমেড স্ক্রাব।
যেমন- অলিভ অয়েল আর কফির গুড়ো মিশিয়ে স্ক্রাব তৈরি করা যেতে পারে।
আবার আলমন্ড অয়েল সাথে আলমন্ড গুড়ো করে বানিয়ে ফেলতে পারেন একটি ময়েশ্চারাইজিং এবং ব্রাইটেনিং স্ক্রাব। অলিভ অয়েল এবং আলমন্ড অয়েল দুটোই নিতে পারেন ক্ল্যারিস থেকে। কারণ ক্ল্যারিস হাতের নাগালে থাকা এমন একটি ব্র্যান্ড যা স্কিন কেয়ারে ব্যবহারযোগ্য সবকিছুরই সর্বোচ্চ কোয়ালিটির গ্যারান্টি দেয়।
ড্রাই স্কিনের জন্য দরকার ময়েশ্চারাইজিং একটা ফেসপ্যাকও। এর জন্যও আপনি ব্যাবহার করতে পারেন বিভিন্ন প্রাকৃতিক উপাদান। যেমন – বেসন, টমেটোর রস, দুধ আর মধু মিশিয়ে বানিয়ে ফেলতে পারেন আপনার পারফেক্ট ফেসপ্যাকটি। তৈলাক্ত ত্বক বা অয়েলি স্কিনের যত্নে প্রাকৃতিক উপাদান
অয়েলি স্কিনের যত্ন নেয়া ড্রাই স্কিনের চেয়ে একটু কঠিন। কারণ অয়েলি স্কিনে সিবাম উৎপাদন স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশি হয়। আর এটা ব্যালেন্স করতে স্কিনের জন্য পারফেক্ট উপাদানটি একটু সচেতন ভাবে সিলেক্ট না করলে স্কিনে ব্রণ বা অ্যাকনির মতো সমস্যা দেখা দিবে।
অয়েলি স্কিনে বিশেষজ্ঞরা এক্সট্রা অয়েল বা অয়েল জাতীয় প্রডাক্ট ব্যাবহার করতে মানা করে থাকেন। কারণ তাতে স্কিনের পোরস অতিরিক্ত অয়েলের কারণে বন্ধ হয়ে স্কিনে ব্রেক-আউট দেখা দিতে পারে।
অয়েলি স্কিনের স্ক্রাব তৈরি করার জন্য ব্যবহার করুন শসা, চিনি এবং মধু। শসা গ্রেট করে নিয়ে তাতে বাকি উপাদানগুলো মিশিয়ে বানিয়ে ফেলুন আপনার পারফেক্ট স্ক্রাবটি। এই স্ক্রাবের শসা স্কিনের অতিরিক্ত তেল কমাবে এবং স্কিনকে দিবে হাইড্রেশন। চিনি ডেড সেল ক্লিন করবে এবং মধু ময়েশ্চার ব্যালেন্স করে দিবে ব্রাইটেনিং ইফেক্ট।
আবার অয়েলি স্কিনের ফেসপ্যাক বানাতে ব্যাবহার করতে পারেন অ্যালোভেরা, হলুদ গুড়া এবং মধু বা আলমন্ড অয়েল। এছাড়াও ওটস গুড়ো করে নিয়ে মধু এবং কাচা দুধের ফেসপ্যাকটিও অয়েলি স্কিনের জন্য বেশ উপকারি। মুলতানি মাটি, চন্দন গুড়া, টকদই এবং মধুর ফেসপ্যাকটি অয়েলি স্কিনের গ্লো ধরে রাখে খুব সুন্দর ভাবে।
অয়েলি স্কিনের জন্য টোনার হিসেবে ব্যাবহার করবেন অ্যাপেল সিডার ভিনেগার। অ্যাপেল সিডার ভিনেগার অয়েলি স্কিনের রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি করে ওপেন পোরস মিনিমাইজ করে এবং স্কিনের পি.এইচ লেভেল ব্যালেন্স করে।
একটি স্প্রে বোতলে অ্যাপেল সিডার ভিনেগারের সাথে পানি মিশিয়ে মুখে স্প্রে করুন সকালে এবং রাতে। এটি স্কিনকে রাখবে হাইড্রেটেড। অ্যাপেল সিডার ভিনেগারের জন্য ব্যাবহার করতে পারেন আর.এস এর অ্যাপেল সিডার ভিনেগার।
আমাদের স্কিন প্রতিদিন যতো ময়লা হয় আমাদের উচিত তা ভালোভাবে ক্লিন করা ডেইলি। বা প্রতিদিনের মেকআপও ভালো মতো তুলে ফেলতে হবে যেন তা স্কিনে থেকে গিয়ে স্কিনের ক্ষতি না করতে পারে। এর জন্য মেকআপ রিমুভার হিসেবে ব্যবহার করুন অলিভ অয়েল বা আলমন্ড অয়েল।
অল্প একটু অলিভ অয়েল বা আলমন্ড অয়েল হাতের তালুতে নিয়ে হালকা উষ্ণ করে স্কিনে অ্যাপ্লাই করুন। এতে স্কিনের মেকআপ খুব সহজেই মেল্ট হবে আর স্কিন হবে ভেতর থেকে ক্লিন। এরপর কুসুম গরম পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন।
এরপর অ্যাপল সিডার ভিনেগার এবং পানির মিশ্রণটি ব্যাবহার করতে পারেন টোনার হিসেবে। স্কিন অয়েলি হলে অ্যাপল সিডার ভিনেগারের পরিমান হবে পানির সমান। আর স্কিন ড্রাই হলে অ্যাপল সিডার ভিনেগারের পরিমান হবে পানির চেয়ে কম।
দেখলেন তো কতো সহজেই ঘরে থাকা প্রাকৃতিক সব উপাদান দিয়ে স্কিন কেয়ার করে ফেলা যায়!
এখন স্কিন কেয়ারের জন্য থাকবেনা আর কোনো দুশ্চিন্তা। আর অলিভ অয়েল থেকে শুরু করে আলমন্ড অয়েল, অ্যাপেল সিডার ভিনেগার, মধু সবকিছুই ব্যাবহার করুন ক্ল্যারিস থেকে।
কারণ একটি ব্র্যান্ডেই যখন কোয়ালিটি গ্যারান্টিসহ সব পেয়ে যাচ্ছেন তখন কোন ব্র্যান্ড থেকে কি নিবেন তা নিয়ে থাকবেনা কোনো দুশ্চিন্তা। এই প্রত্যেকটি প্রোডাক্ট পেয়েযাবেন luvit.com.bd তে।
লিখেছেন –
রাবেয়া চৌধুরী পিয়া