Skin Care

ডু’স এন্ড ডোনট’স অব মেকআপ

মেয়েদের যদি জিজ্ঞেস করা হয় হবি বা শখের কাজ কি তাহলে ১০ জনের মধ্যে ৮ জনই উত্তর দিবে যে মেকআপ করা। আশেপাশে খুঁজলে এমন মেকআপ প্রেমী অনেক অনেক পাওয়া যাবে যাদের মেকআপের কালেকশন দেখলেও হয়ত চোখ কপালে উঠবে। কিন্তু মেকআপ শুধু কিনলেই হয়ে যায় না। জানতে হয় মেকআপের স্টেপ বাই স্টেপ সবকিছুর সঠিক নিয়ম। কারণ সঠিক নিয়ম মেনে মেকআপ না করলে যতই হাই-এন্ড মেকাপ ব্যবহার করা হোক না কেনো ফিনিশিং কিনতে মনমতো বা পারফেক্ট আসবে না। তো চলুন জেনে নেই মেকআপ করার ডু’স এন্ড ডোনট’স।

প্রাইমার  

অনেকে ভাবেন প্রাইমার ব্যবহার করা মেকআপ শুরুর তেমন কোনো গুরুত্বপূর্ণ স্টেপ না। তাই দেখা যায় তারা প্রাইমার ব্যবহার না করে শুধু ময়েশ্চারাইজার দিয়েই ফাউন্ডেশন দেয়া শুরু করেন। কিন্তু এই ধারণা ভুল। কারণ ময়েশ্চারাইজার আমাদের স্কিনকে শুধুমাত্র সফট করবে বা হাইড্রেট করবে। স্কিনের পোরসগুলোকে ময়েশ্চারাইজার ব্লার করবে না। শুধু ময়েশ্চারাইজার দিয়ে ফাউন্ডেশন দিলে পোরসগুলো মেকআপ করার পর ভেসে ওঠে বা বোঝা যায়। এতে মেকআপ স্মুদ লাগেনা। আবার যাদের অয়েলি স্কিন বা মেকআপ স্কিনে বসে না তারা একটা ভালো ম্যাটিফাইং প্রাইমার দিয়ে বেইস করে নিলে মেকআপ করার পর তা অয়েলের কারণে উঠে যায় না বা নষ্ট হয়না। আবার যারা একটা ডিউয়ি ফিনিশ চান, তারা একটা ভালো ইলুমিনেটিং প্রাইমার ব্যাবহার করলে মেকআপ সুন্দর ভাবে ডিউয়ি দেখায়। আমি কখনোই তাই প্রাইমার স্কিপ করার পরামর্শ দেই না। আর যেহেতু আমার ডিউয়ি মেকআপ পছন্দ তাই আমি ব্যবহার করি ফ্লোরমার ইলুমিনেটিং প্রাইমার মেকআপ বেইস। এছাড়া যাদের পোরসের সমস্যা আছে বা যাদের স্কিন অনেক অয়েলি তারা ব্যবহার করতে পারেন ফ্লোরমার পোর মিনিমাইজার মেকআপ প্রাইমার আর ফ্লোরমার ম্যাটিফাইং মেকআপ প্রাইমার। আলতো হাতে ভালোভাবে অ্যাপ্লাই করে নিতে হবে প্রাইমার ঠিক যেভাবে ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করেন। স্কিন টাইপ বুঝে প্রাইমার ব্যবহার করুন কিন্তু প্রাইমার কখনো স্কিপ করবেন না। 

কালার কারেক্টিং 

“কালার কারেকশন করার কি দরকার?একটা ফুল কাভারেজ ফাউন্ডেশন আর কন্সিলার ব্যাবহার করলেই হয়। এতেই আমার স্কিনের দাগ আর ডার্ক সার্কেল আর বোঝা যাবেনা” 

– এই ধারণা একদম ভুল। 

কালার কারেকশন সবার লাগেনা,এটা যেমন ঠিক তেমনি কিছু মানুষের জন্য কালার কারেকশন না হলেই না, এটাও ঠিক। কিন্ত হালকা পাতলা কালার কারেকশন সবারই আসলে করে নেয়া উচিত। কিন্তু এই বাড়তি স্টেপ নিয়ে সবারই প্রায় ঘোর অবহেলা। তাই বলবো শুধু তাদের কথা যাদের কালার কারেকশন না হলেই না। 

স্কিনে অনেক পিগমেন্টেশন আছে, একনে বা পিম্পলের অনেক স্পট আছে বা চোখের নিচে আছে ডার্ক সার্কেলস অথবা যারা স্কিনের একদমই যত্ন নেয় না, এই ধরণের স্কিন কন্ডিশনে কালার কারেকশন মাস্ট! মাস্ট! মাস্ট। কারণ এইধরণের সমস্যা যখন স্কিনে থাকে তখন দেখা যায় ফাউন্ডেশন যতই ফুল কাভারেজ ব্যাবহার করা হোক না কেনো মেকআপ করার কিছুক্ষণ পর মেকাপ অ্যাশি হয়ে যায় অথবা পিগমেন্টেশন বা ডার্ক সার্কেল এরিয়ার কালার চেঞ্জ হয়ে যায়। এই সমস্যার সমাধাণ হলো কালার কারেক্ট করে নেয়া। কালার কারেক্ট করার উদ্দেশ্যই হলো স্কিনে একটা টোন বজায় রাখার চেষ্টা যেনো মেকাপ করার পর ফুল লুকটা দেখতে একই কালারের লাগে।কালার কারেক্ট করতে ব্যাবহার করতে পারেন ফ্লোরমারের সি.সি. ক্রিম বা কালার কারেক্টিং ক্রিম। ফ্লোরমারের রয়েছে ৪টি কালারের সি.সি. ক্রিম যা আপনি সহজেই আপনার স্কিনের সমস্যা অনুযায়ী ব্যবহার করতে পারবেন। যেমন যাদের স্কিন মেকাপের পর ডাল দেখায় তারা ব্যাবহার করবেন আর যাদের ইয়েলো আন্ডারটোন তারা ব্যবহার করবেন পার্পল কালার কারেক্টিং ক্রিম। আবার যাদের পিগমেন্টেশন বা ডার্ক সার্কেল অনেক বেশি তারা ব্যবহার করবেন পিচ কালার কারেক্টিং ক্রিম। ফ্লোরমারের রয়েছে পার্পল, গ্রিন,পিচ আর লাইট পার্পল কালারের কালার কারেক্টর। আপনার স্কিনের সমস্যা বুঝে সিলেক্ট করে নিতে হবে আপনার জন্য উপযোগী কালার কারেক্টরটি। কালার কারেক্টর অ্যাপ্লাই করতে পারেন আলতো হাতে ব্লেন্ড করে বা ব্রাশের সাহায্যে। কিন্তু কখনো ঘষে ঘষে কালার কারেক্টর অ্যাপ্লাই করবেন না।

ফাউন্ডেশন

প্রথমেই স্কিন বুঝে সিলেক্ট করে নিতে হবে আপনার ফাউন্ডেশনটি। যাদের অয়েলি স্কিন তারা কিন্তু ভুলেও ডিউয়ি বা অয়েল বেইসড ফাউন্ডেশন কিনবেন না। তারা কিনবেন ম্যাট ফাউন্ডেশন বা ফ্লোরমার পারফেক্ট কাভারেজ ফাউন্ডেশন। আর যাদের ড্রাই স্কিন তারা নিবেন হাইড্রেটিং, ডিউয়ি বা অয়েল বেইসড ফাউন্ডেশন। অয়েলি স্কিনের জন্য নিতে পারেন ফ্লোরমার ম্যাট টাচ ফাউন্ডেশনটি। আর ড্রাই স্কিনের জন্য নিতে পারেন ফ্লোরমার ফিউশন পাওয়ার ফাউন্ডেশন সিরাম বা ফ্লোরমার ইনভিসিবল কাভার এইচ.ডি. ফাউন্ডেশন। 

অনেকে ভাবে যত ব্রাইট ফাউন্ডেশন কিনবো ততই সুন্দর মেকাপ হবে। কিন্তু এই ধারণা পুরোপুরি ভুল। কারণ অতিরিক্ত ব্রাইট ফাউন্ডেশন কিনলে মেকাপ দেখতে খুবই বাজে আর আনন্যাচারাল লাগে। তাই ফাউন্ডেশন কিনতে হবে একদম স্কিন টোনের সাথে ম্যাচ করে স্কিনের আন্ডার-টোন অনুযায়ী। যারা একটু ব্রাইট ফাউন্ডেশন চান তারা স্কিন টোন থেকে ১/২ শেইড ব্রাইট ফাউন্ডেশন কিনবেন। এর চেয়ে বেশি ব্রাইট কিনলে মেকআপ বাজে দেখাবে। 

এবার আসি ফাউন্ডেশন অ্যাপ্লাই-এ। ফাউন্ডেশন অ্যাপ্লাই করতে হবে ফাউন্ডেশন ব্রাশ বা বিউটি ব্লেন্ডার দিয়ে। ব্রাশ দিয়ে ফাউন্ডেশন অ্যাপ্লাই করলে হালকা ভাবে যতক্ষণ ফাউন্ডেশন স্কিনের সাথে একেবারে মিশে না যায় ততক্ষণ ব্লেন্ড করতে হবে। ফাউন্ডেশন ব্রাশের ক্ষেত্রে ফ্লোরমার ফাউন্ডেশন ব্রাশ টা আমার বেশ পছন্দের। আর বিউটি ব্লেন্ডার দিয়ে ফাউন্ডেশন অ্যাপ্লাই করতে গেলে প্রথমেই ব্লেন্ডারটি একটু ভিজিয়ে নিতে হবে। এরপর তা দিয়ে আস্তে আস্তে ড্যাব ড্যাব করে ফাউন্ডেশন ব্লেন্ড করতে হবে। ফ্লোরমার বিউটি ব্লেন্ডারটি খুবই সফট আর ব্লেন্ড করে নিমিষেই। ফাউন্ডেশন কখনোই ঘষবেন না এতে হারশ লাইন থেকে যাবে আর মেকআপ ফেটে যাবে। 

কন্সিলার

কন্সিলারের মূল কাজ মেকআপটা একটু ব্রাইট করে হাইলাইট করা আর ফাউন্ডেশন অ্যাপ্লাই এর পর আরেকটু ভালো কাভারেজ নিশ্চিত করা। আন্ডার-আই, নোস-ব্রিজ, ফোরহেড এরিয়া আর লিপ এরিয়া- এই অংশগুলোতে কন্সিলার দিতে হয়। এই অংশগুলো একটু ব্রাইট হলে বা হাইলাইটেড হলে মেকাপ দেখতে ভালোলাগে। ফ্লোরমারের রয়েছে কন্সিলারের বিশাল কালার রেঞ্জ। আপনার পারফেক্ট শেইডটি তাই বেছে নিতে পারবেন সহজেই। আর ফাউন্ডেশনের চেয়ে কন্সিলার ব্লেন্ড করা একটু টাফ আর সময়ও একটু বেশি লাগে ব্লেন্ড হতে। তাই একদম হালকা ভাবে কন্সিলার ব্লেন্ড করতে হবে সময় নিয়ে। তাড়াহুড়া করলে কন্সিলার অ্যাপ্লাই করার পর ক্র্যাক করবে আর স্কিনে মিশে যেতে চাবেনা।

কম্প্যাক্ট পাউডার আর লুজ পাউডার

সব লিকুইড প্রডাক্ট ব্যাবহারের পর সেগুলোকে একদম সিল করে দিতে ব্যবহার করতে হবে পাউডার যেন লিকুইড প্রডাক্টগুলো উঠে বা মেল্ট হয়ে না যায়। এই ক্ষেত্রে যারা অয়েলি স্কিনের তারা বেকিং করবে লুজ পাউডার দিয়ে। কারণ অয়েলি স্কিনে বেকিং মাস্ট। আর যারা ড্রাই বা নরমাল স্কিনের তারা কম্প্যাক্ট পাউডার দিয়ে মেকাপ সেট করবে। লুজ হোক বা কম্প্যাক্ট ফ্লোরমারের এই দুইটা পাউডারই বেস্ট।

কন্ট্যুরিং নাকি ব্রোঞ্জিং?

একই মনে হলেও এই দুইটা কাজ মোটেও এক না। কন্ট্যুর করতে হবে একটু ডার্ক কন্ট্যুর পাউডার দিয়ে যাতে ফেইসের ফিচারগুলো আরো সুন্দর ভাবে ফুটে উঠে বা যাদের ফেইস অনেক ফ্লাফি বা ফোলা তা যেনো একটু শেইপড আর ডিফাইনড লাগে। আর ব্রোঞ্জিং করতে হবে তাদের যারা ফেইস বেশি চাপা বা শেইপড না দেখিয়ে শুধু একটু ন্যাচালার লুকিং মেকাপ করতে চায়। ব্যাবহার করতে পারেন ফ্লোরমার রিশেইপ ব্রোঞ্জিং পাউডার। 

ব্লাশ-অন

গালের চিকবোন এরিয়ার আশেপাশে স্ফিত অংশে দিতে হবে ব্লাশ-অন। তবে এখন হালকা করে নাকেও ব্লাশ ব্যাবহার করা হয়। ফ্লোরমারের রয়েছে অনেক অনেক ব্লাশ কালেকশন। 

কাজল আর আইলাইনার

যাদের চোখ বড় তারা মোটা করে আইলাইনার এবং চিকন করে কাজল অ্যাপ্লাই করবে আর যাদের চোখ ছোট তারা একটু মোটা করে কাজল আর চিকন করে আইলাইনার অ্যাপ্লাই করবে। আবার ছোট চোখ একটু বড় দেখাতে দিতে হবে ন্যুড কাজল।  আমি সবসময়ই ফ্লোরমারের কাজল আর আইলাইনারের ফ্যান। ফ্লোরমারের ব্ল্যাক এর পাশাপাশি কালারফুল কাজল,আই লাইনারও রয়েছে। 

চেষ্টা করেছি কিছু না জানলে বা না করলেই না এইরকম ডু’স এন্ড ডোনট’সগুলো তুলে ধরতে। আশা করি আপনাদের অনেকেরই হয়ত অনেক ভুল ধারনা ক্লিয়ার হবে। এই বেসিক নিয়ম গুলো মেনে মেকাপ করলেই পেয়ে যাবেন আপনার মনের মতো মেকআপ ফিনিশিং। 

লিখেছেন –
রাবেয়া চৌধুরী পিয়া

Leave a Reply

Your email address will not be published.