দিন যতই যাচ্ছে আমাদের একেক সমস্যার নিত্যনতুন সমাধান বের হতে দেখছি আমরা। কিন্তু কিছু সমস্যার সমাধানে কিন্তু সেই আগের সমাধানই যেনো মানুষের কাছে বেশি গ্রহণযোগ্য।
ঠিক যেমন ক্যাস্টর অয়েল। চুল পড়া, ত্বকের যত্ন, বিভিন্ন ব্যাথায় মালিশ হিসেবে ক্যাস্টর অয়েল সবসময়ই একটি নির্ভরযোগ্য সমাধান।
অনেকের কাছে ক্যাস্টর অয়েল রেড়ির তেল নামেও পরিচিত। ক্যাস্টর অয়েলে রয়েছে অনেক অনেক উপকারী উপাদান যার ফলে বিভিন্ন সমস্যার সমাধান হিসেবে এটি মানুষ ব্যাবহার করে আসছে নানান সমস্যার সমাধান হিসেবে। ক্যাস্টর অয়েল মূলত একটি উদ্ভিজ্জ তেল যা ক্যাস্টর বিন্স থেকে তৈরি হয়। এতে রয়েছে প্রচুর অ্যাান্টি-অক্সিডেন্ট যা চুল ও ত্বকের যত্নে অসামান্য ভূমিকা রাখে। এছাড়াও ক্যাস্টর অয়েলে রয়েছে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাটি অ্যাসিড, ভিটামিন-ই, ভিটামিন বি৩ এবং মিনারেলস্। এই অয়েল হালকা হলুদ রঙ এর হয় এবং এর ঘনত্ব হয় অনেক। এতে তেমন কোনো গন্ধ থাকেনা। ঘনত্ব বেশি হওয়ার কারণে অনেকেই বিভিন্ন জিনিসের সাথে মিশিয়ে ব্যাবহার করতে বেশি স্বাচ্ছ্যন্দবোধ করে। ক্যাস্টর অয়েল নিয়ে অনেকেরই একটা ভ্রান্ত ধারণা থাকে অনেক সময় আর তা হলো ক্যাস্টর বিন্সে রাইসিন নামক এক ধরণের টক্সিক এনজাইম থাকে আর এর জন্য অনেকে ভাবে ক্যাস্টর অয়েলকেও বিষাক্ত ভাবে। কিন্তু আসল কথা হলো ক্যাস্টর অয়েলের ক্ষেত্রে এই রাইসিন এর কোনো ভূমিকা নেই। কারণ ক্যাস্টর অয়েল তৈরি করার সময় তাতে যেই তাপমাত্রা বা হিট দেওয়া হয় তার ফলে রাইসিন নস্ট হয়ে নিষ্ক্রিয় হয়ে যায়। ফলে ক্যাস্টর অয়েল হয় একদম খাঁটি এবং ভেজাল মুক্ত এবং কোনো ভয় ছাড়াই যেকোনো কাজে ব্যাবহার করা যায়। ক্যাস্টর অয়েল ব্যাবহারের ক্ষেত্রে সবসময় আনরিফাইন্ড অয়েল টা ব্যাবহার করতে হবে। তাহলে ক্যাস্টর অয়েলের উপকারিতা পুরোপুরি পাওয়া যাবে।
চুলের যত্নে ক্যাস্টর অয়েল – ছেলে হোক বা মেয়ে, সবারই একটি কমন সমস্যার নাম হলো চুল পড়ে যাওয়া বা হেয়ারফল। আর এই সমস্যার সবার জন্যই একটি কমন সমাধান হলো ক্যাস্টর অয়েল ব্যাবহার করা। ক্যাস্টর অয়েলে থাকা অ্যান্টি-অক্সিডেন্টস স্ক্যাল্পকে রাখে হাইড্রেটেড।
ক্যাস্টর অয়েলের সাথে নারকেল তেল, মেথি, আর পেয়াজের রস একসাথে মিশিয়ে একটু গরম করে চুলে ম্যাসাজ করলে চুল পড়া বন্ধ হবে ম্যাজিকের মতো। এছাড়াও নতুন চুল গজাবে এবং চুল হবে অনেক হেলদি। ক্যাস্টর অয়েল ১০-১৫ মিনিটের বেশি ম্যাসাজ করা উচিত না। এছাড়াও ক্যাস্টর অয়েল ২/৩ ঘন্টার বেশি চুলে রাখা ঠিক নয়। কেউ যদি ক্যাস্টর অয়েল সারারাত দিয়ে রাখে সেই ক্ষেত্রে চুল ড্রাই হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে । ক্যাস্টর অয়েল চুলের আগা ফাটা রোধেও বেশ কার্যকরী। সমপরিমানে ক্যাস্টর অয়েল এবং নারকেল তেল মিশিয়ে চুলের আগায় রেগুলার দিলে আগা ফাটা সমস্যা কমে যাবে এবং মাঝে দিয়ে চুল ভেঙ্গে যাওয়ার সমস্যাও কমে আসবে। পাকা চুল কমাতেও সাহায্য করে ক্যাস্টর অয়েল। যাদের চুল অকালে পেকে যাচ্ছে তারা নিয়মিত পাকা চুলে ক্যাস্টর অয়েল দিলে চুল পাকার সমস্যা কমে আসবে। যেকোনো হেয়ারপ্যাকের মধ্যে ক্যাস্টর অয়েল মিশালে হেয়ারপ্যাকের গুনাগুন অনেক বেড়ে যায়। মেহেদির সাথে ক্যাস্টর অয়েল মিশিয়ে চুলে দিলে মেহেদির কারনে চুলে কোনো রুক্ষভাব আসে না। ক্ল্যারিসের ক্যাস্টর অয়েল টি পেয়ে যাবেন আপনার আশে পাশের যেকোনো শপেই। ক্ল্যারিস ক্যাস্টর অয়েল বর্তমানে সবচেয়ে বেস্ট ক্যাস্টর অয়েল।
ত্বকের যত্নে ক্যাস্টর অয়েল – ত্বকের যত্নেও কোনো অংশে পিছিয়ে নেই ক্যাস্টর অয়েল। চুলকে যেমন হেলদি করে পাশাপাশি ত্বককেও রাখে মসৃণ এবং প্রাণবন্ত।
সামান্য ক্যাস্টর অয়েল হাতের তালুতে নিয়ে হালকা একটু উষ্ণ করে তা মুখে ম্যাসাজ করলে মুখের ত্বকের রক্ত সঞ্চালন ভালো হয় এবং এটি অ্যান্টি-এজিংয়েও ভূমিকা রাখে। প্রতিদিন ক্যাস্টর অয়েল এভাবে মুখে ম্যাসাজ করলে আপনি থাকবেন এভারগ্রিন। ত্বকে ফাইন লাইন বা রিঙ্কেলস দেখা দিবেনা সাথে মুখের ত্বক থাকবে সবসময় গ্লোয়িং এবং টানটান।
আবার অনেকেই পায়ের গোড়ালি ফেটে যাওয়ার সমস্যায় ভুগে অনেক বেশি। ক্যাস্টর অয়েল গোড়ালির ফাটা জায়গায় দিয়ে রাখলে তা আস্তে আস্তে ঠিক হয় এবং গোড়ালি আগের চেয়েও অনেক সফট হবে। ক্যাস্টর অয়েল, আলমন্ড অয়েল এবং অলিভ অয়েল একসাথে মিশিয়ে বডি অয়েল হিসেবে ব্যাবহার করলে ভালো ফলাফল পাওয়া যাবে। আবার ত্বকের হারানো উজ্জলতা ফিরিয়ে আনতেও ক্যাস্টর অয়েল ভূমিকা রাখে। ক্যাস্টর অয়েল ব্যাবহারে ত্বকের পিগমেন্টেশন দূর হয়। স্কিন টোনের অসমতা দূর হয়।
ক্ল্যারিসের ক্যাস্টর অয়েলে রয়েছে প্রতিটি উপাদান একদম ব্যালেন্সড ভাবে। আমি নিজেও অনেক দিনের ব্যাবহার করার অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি ক্ল্যারিস ক্যাস্টর অয়েল আমার ব্যাবহার করা সেরা একটা প্রডাক্ট।
আইব্রো, আইল্যাশ এবং ঠোটেঁর যত্নে ক্যাস্টর অয়েল – অনেকের আইল্যাশই দেখা যায় বেশ হালকা থাকে। বা অনেকের আবার বয়স বাড়ার সাথে সাথে আইল্যাশ পড়ে যায়। তাদের উচিত প্রতিদিন ঘুমানোর আগে আইল্যাশে ক্যাস্টর অয়েল দিয়ে ঘুমানো। এতে করে দ্রুত আইল্যাশ ঘন হবে এবং পড়েও যাবেনা। আইব্রো এর ক্ষেত্রেও একই ভাবে ক্যাস্টর অয়েল ব্যাবহার করলে পাতলা আইব্রো আস্তে আস্তে ঘন হয়। এছাড়াও ঠোঁটের স্ক্রাব বানাতে ক্যাস্টর অয়েল ব্যাবহার করা যাবে। চিনি আর ক্ল্যাস্টর অয়েল মিশিয়ে তা দিয়ে ঠোঁট স্ক্রাব করলে ঠোঁটের মরা চামড়া সহজেই উঠে আসে এবং ঠোঁট হয় গোলাপি।
স্বাস্থ্যের যত্নে ক্যাস্টর অয়েল – ক্যাস্টর অয়েল এমন একটি উপকারি তেল যার গুনাবলি শুধুমাত্র চুল বা ত্বকের যত্নেই শেষ হয়না। স্বাস্থ্যের যত্নেও এর ভূমিকা অনেক।
শারীরিক বিভিন্ন ব্যাথার জায়গায় যদি ক্যাস্টর অয়েল ম্যাসাজ করা যায় তাহলে ব্যাথা কমে যাবে। অনেক সময়ই বিভিন্ন কারনে মাসেলে স্ট্রেইন হয় বা টান লাগে। সেই টান লাগা জায়গায় যদি ক্যাস্টর অয়েল হালকা গরম করে ম্যাসাজ করা হয় তাহলে তা আস্তে আস্তে সেই জায়গার রক্ত সঞ্চালন বাড়ায় এবং স্ট্রেইন ঠিক হয়। মেন্সট্রুয়াল ক্র্যাম্পের সময় ক্রাম্প যেখানে হয় সেখানে ক্যাস্টর অয়েল ম্যাসাজ করলে উপকার পাওয়া যায়।
এছাড়াও যাদের নখ ভেঙ্গে যাওয়ার সমস্যা আছে তারা নখে ক্যাস্টর অয়েল ব্যাবহার করলে নখ মজবুত হবে।
ক্যাস্টর অয়েল আসলেই এমন একটি তেল যেটার গুনাবলি বলে শেষ করা কঠিন। ঠিক তেমনই বাজারে হাজার হাজার ব্যান্ডের ক্যাস্টর অয়েলের ভিড়ে একদম আনরিফাইন্ড আর পিউর ক্যাস্টর অয়েল কোনটা তা আমরা বুঝে উঠতে হিমশিম খাই। এর জন্যই আমার সাজেশন থাকবে ক্ল্যারিসের ক্যাস্টর অয়েলটি ব্যাবহার করার। কারণ ক্ল্যারিসের যেকোনো প্রডাক্টের গুনগত মানই থাকে অক্ষুণ্ণ এবং খাঁটি। তাই হাজার টা ব্র্যান্ডের মাঝে কনফিউজড না হয়ে নির্ভর করুন ক্ল্যারিসের উপর। এতে প্রডাক্ট নিয়ে ভাবতে ভাবতে সময়ও নস্ট হবেনা আর ব্যাবহার করে ফলাফলও পাবেন চোখে পরার মতো।
লিখেছেন –
রাবেয়া চৌধুরী পিয়া